বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন

শতকরা ৯০ ভাগের বেশি করোনা টেস্ট করাতে অনাগ্রহী

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০
  • ৪৪৬ Time View

বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি করোনা টেস্ট করাতে অনাগ্রহী। এক জরিপের বরাত দিয়ে এমনটা জানাচ্ছে বিবিসি বাংলা।

জরিপটি পরিচালনা করেন ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও রিসার্চ সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান-উর রহমান। এতে অংশ নেওয়া ১২০২ জন ব্যক্তির মধ্যে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসক, যারা কভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা জানান, তাদের কাছে আসা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি করোনা পরীক্ষা করাতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে।

কারণ হিসেবে উত্তরদাতাদের ৫৩ শতাংশের বেশি বলেছেন, টেস্ট করানোর সুযোগের অভাব অনাগ্রহ তৈরি করেছে। এ ছাড়া পরীক্ষার ফল দেরি করে আসা ও ভুল রিপোর্ট আসার কারণে আগ্রহ হারিয়েছে ১৬ শতাংশ রোগী। সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ও রয়েছে, এই হারটিও শতকরা ১৬ ভাগ।

 

তবে এই জরিপটি যেহেতু পরিপূর্ণ পদ্ধতি মেনে করা হয়নি তাই একে অংশগ্রহণকারীদের অনুমান বলে বর্ণনা করেন ডা. রিদওয়ান। তিনি বলেন, যারা এতে অংশ নিয়েছে তারা চিকিৎসক যারা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের অভিজ্ঞতা, সমাজের একটি প্রতিনিধিত্বশীল অংশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, “সোশ্যাল স্টিগমাটা অনাগ্রহ, যেটা আন-সেফ টেস্টিং সাইট সেটা অনাগ্রহ, টেস্ট পাওয়া যাচ্ছে না যেটা সেটা অনাগ্রহ, কস্ট যেটা সেটাও অনাগ্রহ, দেরি করে রিপোর্ট এটাও অনাগ্রহ। তাহলে মোটামুটি ৯০ ভাগের বেশি মানুষ অনাগ্রহের কারণে টেস্ট করতে চায় না।”

এ দিকে দেশে গত কয়েক দিনে টেস্টের সংখ্যা বেশ কমেছে। রবিবার এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কিছু বেশি। তবে সোমবার কিছুটা বেড়ে ১৩ হাজারের কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

ডা. রিদওয়ান মনে করেন শুধু মানুষের অনাগ্রহের কারণে টেস্টের সংখ্যা কমেনি। বরং এর পেছনে আসলে সরকারের দায় রয়েছে। কারণ সরকার কম পরীক্ষা করাতে চায় যাতে কভিড শনাক্ত কম হয়।

তিনি বলেন, “সরকার প্রথম থেকেই চেয়েছে যে টেস্ট কম হোক, টেস্ট কম হলে রোগী কম হবে, এবং রোগী কম হলে আমরা জিতেছি এটার বিরুদ্ধে, করোনার বিরুদ্ধে।”

একই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন করোনা উৎসর্গধারীর মন্তব্য প্রকাশ করেছেন বিবিসি বাংলা। টেস্টে অনাগ্রহের কারণ হিসেবে তারা পরীক্ষার সুযোগ না থাকায়, সামাজিক অবমাননার ভয়, টেস্টের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে ভোগান্তি ও আস্থার অভাবের কথা জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন রানা। তিনি জানান, নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। বলেন, “আগে যে বাসায় ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করতে হতো এখন সেখানে ২ জনের নমুনা নিতে হয়। তবে বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে এখন।”

এমন অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরাও।

এ বিষয়ে কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, নমুনা পরীক্ষা না করে সার্টিফিকেট দেয়া বা ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়া, ফি নির্ধারণের মতো পদক্ষেপের জন্য মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, “এর দায়ভারটা আসলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার। মানুষকে আমরা তো উদ্বুদ্ধ করতে পারিই নাই, বরং মানুষ হতাশ হয়েছে। আস্থা হারিয়েছে।”

তিনি মনে করেন মানুষের মধ্যে এই আস্থাহীনতা কাটাতে হলে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ঢেলে সাজাতে হবে।

এ দিকে সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ কিট মজুদ রয়েছে। দেশে করোনা পরীক্ষার কোন সংকট নেই। ভবিষ্যতে করোনা পরীক্ষা বাড়াতে আরো উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তবে সরকার করোনা পরীক্ষার তুলনায় দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধের অভিযানের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার বলেন, এখনো টেস্টের উপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

শনাক্ত কম দেখানোর জন্য টেস্ট কম করার যে অভিযোগ সেটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক। তিনি বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কম <নাক্ত হওয়ার জন্য কম টেস্ট করাবো এরকম অবশ্যই না। আমরা ল্যাব বেশি বেশি স্থাপন করছি টেস্ট বেশি বেশি করানোর জন্য। আমাদের পর্যাপ্ত কিটও আছে।”

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত বুলেটিনে জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যাতে সনাক্ত হয়েছে প্রায় ৩০০০ জন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015 teamreportbd
কারিগরি সহযোগিতায়: Freelancer Zone
freelancerzone