ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রথম তার খোলামেলা কিছু বক্তব্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযোগ করেন তার দেশকে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন আমেরিকার মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধের অজুহাতে রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউরোপে নেটো জোট নিয়ে রাশিয়ার যেসব উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেগুলোকে পাত্তাই দিচ্ছেনা। তিনি বলেন পূর্ব ইউরোপে নেটোর সম্প্রসারণ বন্ধ সহ নিরাপত্তার যেসব গ্যারান্টি রাশিয়া চাইছিল, যুক্তরাষ্ট্র তা অগ্রাহ্য করেছে।মঙ্গলবার মস্কো সফররত হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সাথে এক বৈঠকের পর ভ্লাদিমির পুতিন বলেন: “আমার মনে হচ্ছেনা যে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে আমেরিকার আদৌ কোনো চিন্তা রয়েছে…তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে রাশিয়ার অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়া। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমেরিকা ইউক্রেনকে ব্যবহার করছে।”
মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন টুইট করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র “এমন একটি সামরিক সংঘাত বন্ধ করার চেষ্টা করছে যা থেকে কারোরই কোনো স্বার্থ উদ্ধার হবেনা।”আমেরিকার এবং নেটো সামরিক জোটের সদস্যরা বলছে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে, যে অভিযোগ অবশ্য রাশিয়া বার বার অস্বীকার করেছে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ পারমানবিক অস্ত্রধারী দুই দেশ – রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে বৈরিতার ইতিহাস বহুদিনের। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে রাশিয়ার পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান অংশ ছিল ইউক্রেন।রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন বলেন, নেটো জোটের সদস্য হওয়ার যে ইচ্ছা ইউক্রেনের রয়েছে তা যদি মানা হয়, তাহলে নেটোর অন্য সদস্য দেশের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।”ভেবে দেখুন ইউক্রেন নেটোর সদস্য হয়ে গেলো এবং ক্রাইমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনা অভিযান শুরু করলো, ” বলছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
“আমরা কি তখন নেটোর সাথে যুদ্ধ শুরু করবো? কেউ কি এমন পরিস্থিতি নিয়ে ভেবেছেন? আমার তো মনে হয় তারা ভাবেননি।”রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনকে কখনই নেটো জোটের সদস্য করা চলবে না এবং পূর্ব ইউরোপে নেটো নতুন করে কোনো সম্প্রসারণ করতে পারবে না।আমেরিকা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়ার এই দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলছে, রাশিয়ার সাথে সংলাপের ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাবরভের সাথে টেলিফোনে এক আলাপ শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি ব্লিনকেন বলেন, “পারস্পরিক নিরাপত্তা উদ্বেগ” নিয়ে সংলাপ চালিয়ে যেতে আমেরিকা আগ্রহী।
এদিকে, পূর্ব ইউরোপে নেটো জোটের তৎপরতা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো জোট সম্প্রতি রাশিয়ার কাছে যে বিবৃতি এবং প্রস্তাব পাঠিয়েছিল সেগুলো স্পেনের দৈনিক এল পাইস ফাঁস করে দিয়েছে বলে বলা হচ্ছে।ফাঁস হওয়া ঐ নথিতে দেখা গেছে যে ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের বদলে নেটো আমেরিকার সাথে পারমানবিক অস্ত্র মোতায়েন কমানো এবং আস্থা বাড়াতে অন্যান্য বেশ কিছু ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছে।ফাঁস হওয়ার নথিগুলো আসল কিনা – এ প্রশ্নে নেটোর একজন কর্মকর্তা বিবিসির কাছে কিছু বলতে চাননি।দুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র জানায় ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা কমাতে আমেরিকার পাঠানো প্রস্তাবের জবাব রাশিয়া তাদের দিয়েছে।কিন্তু এর পরপরই রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া এখনও কোনো জবাব দেয়নি। রুশ একটি সরকারি সূত্র রিয়া সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, মস্কো এখনও তাদের জবাব তৈরি করছে।
ওদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদোমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার সতর্ক করেছেন তার দেশে রাশিয়া সামরিক অভিযান চালালে “সেই যুদ্ধ শুধু ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এই যুদ্ধ পুরো ইউরোপ ছড়িয়ে পড়বে। ব্যাপক এক যুদ্ধ শুরু হবে।”ভারী অস্ত্র এবং ট্যাংক নিয়ে প্রায় লাখ খানেক রুশ সৈন্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের সীমান্তে অবস্থান নিয়ে রয়েছে।রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং জাতিগত রুশ অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে রক্তাক্ত বিদ্রোহে সরাসরি সমর্থন দেয়। সেই ঘটনার আট বছর পর নতুন করে রাশিয়া- ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।