ভারতীয় বিমানবাহিনী এক বার্তায় জানিয়েছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী এবং আরো ১১ জন আরোহী নিহত হয়েছেন।জেনারেল রাওয়াত ২০২০ সালের পয়লা জানুয়ারি দেশটির চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।দেশটির বিমান বাহিনী জানিয়েছে দুর্ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তামিলনাড়ুতে বিধ্বস্ত হবার সময় মি. রাওয়াতকে বহন করছিল একটি আইএএফ এমআই-সেভেনটিন ভিফাইভ IAF MI17V5 হেলিকপ্টার।ট্রুপস, অস্ত্র বহন, অগ্নি দুর্ঘটনা, পেট্রলিং এবং সার্চ ও উদ্ধার তৎপরতায় এই হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়।এটি সমুদ্র এবং মরু পরিস্থিতিতে ওড়ার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা।ভারতীয় বিমান বাহিনী ভিআইপি চপার হিসেবে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।ভারতে ভিভিআইপি ফ্লাইট মানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। বলা হয়, যেখানে বিমান নামার কোন ব্যবস্থা নেই, সেখানে দেশের ভিআইপিদের চলাচলের জন্য এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।সম্প্রতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাদাখ, কেদারনাথের মত দুর্গম জায়গায় যাবার সময় এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিলেন।প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মত ভিভিআইপিরা দেশটির প্রত্যন্ত কোন এলাকায় যেতে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।
তবে দেশটিতে এর আগেও বিমান দুর্ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মৃত্যুর বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে।
বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর ঘটনাকে বলা হয় ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত বিমান দুর্ঘটনা ।.ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে এবং রাজীব গান্ধীর ভাই সঞ্জয় গান্ধীর বিমান ১৯৮০ সালের ২৩শে জুন দিল্লীতে বিধ্বস্ত হয়।তিনি নিজেই তখন প্লেন চালাচ্ছিলেন।
২০০১ সালে সেপ্টেম্বরে কংগ্রেস নেতা মাধবরাও সিন্ধিয়া উত্তর প্রদেশের মাইনপুরি জেলার ভোগাও তহসিলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন।সিন্ধিয়া কানপুরে একটি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।বিমানে তার সাথে আরো ৬জন মানুষ ছিলেন।দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জিন্দাল গ্রুপের ১০ আসনের চার্টার্ড সেসনা সি৯০ মডেলের বিমানটি উড্ডয়ন করে।কিন্তু সেখান থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে আগ্রায় সেটি বিধ্বস্ত হয়ে সব কজন যাত্রী নিহত হন।মাধবরাও সিন্ধিয়াকে কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করা হত।তরুণ এবং জনপ্রিয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত তাকে। রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেসে তার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল বলে ধরা হত।
অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডিসহ পাঁচজনকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে আকাশে ওড়ার পর নালামালা বনভূমি এলাকায় নিখোঁজ হয়ে যায়।পরে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় সেটি খুঁজে পাওয়া যায়।৩রা সেপ্টেম্বর কার্নুল থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরে রুদ্রকন্ডা পাহাড়ে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ২০১১ সালের এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দর্জি খান্ডু নিহত হন।চার আসনের সিঙ্গেল ইঞ্জিন হেলিকপ্টারটি ছিল পাওয়ান হ্যানস এএস-বি৩৫০-বি৩ মডেলের।তাওয়াং থেকে ওড়ার ২০ মিনিটের মধ্যে হেলিকপ্টারটি নিখোঁজ হয়ে যায়।চারদিন নিখোঁজ থাকার পর পঞ্চম দিনে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং বিমানে থাকা পাঁচজনের মৃতদেহ খুঁজে পায় উদ্ধারকারী দল।
২০০২ সালের মার্চে লোকসভার সাবেক স্পীকার জিএমসি বালাইয়োগী অন্ধ্রপ্রদেশে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন।বেল ২০৬ মডেলের হেলিকপ্টারটি ছিল তার ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার, যাতে বালাইয়োগীর সঙ্গে তার দেহরক্ষী এবং একজন সহকারী ছিলেন।দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে হেলিকপ্টারের কারিগরি ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছিল।
২০০৫ সালের এপ্রিলে ভারতের ইস্পাত ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ ওপি জিন্দাল বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত যান।তার সাথে হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বানশীলাল সিংয়ের ছেলে সুরিন্দার সিং এবং পাইলটও নিহত হন।তিনি চণ্ডীগড় থেকে দিল্লিতে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনার সময় ওপি জিন্দাল হরিয়ানার জ্বালানী মন্ত্রী ছিলেন, এবং দেশটির নেতৃস্থানীয় শিল্পপতি ছিলেন।ওই জিন্দাল ফোর্বস তালিকায় বিশ্বের ৫৪৮তম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছিলেন।১৯৭৩ সালের মে মাসে ভারতের সাবেক জ্বালানী ও খনিজ বিষয়ক মন্ত্রী মোহন কুমারামাঙ্গলম বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছিলেন।
বিবিসি