বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশের প্রথম Smart Village প্রবেশ গেইট এর শুভ উদ্বোধন জাতীয় বীমা দিবসে লক্ষ্মীপুর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের মৃত্যুদাবীর চেক প্রদান পবিত্র শবে বরাত ৭ মার্চ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত প্রায় এক লাখ, মৃত্যু পৌনে চারশো নিজের নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী মিরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান পাখির স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর ইউসিসিএল’র সভাপতি ও বিআরডিবি’র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কতটা বিপজ্জনক!

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৫৭ Time View

এক চেনা উদ্বেগ আমাদের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে – আর তা হলো করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট – ওমিক্রন।সর্বশেষ ‌এই ভ্যারিয়েন্টটি কোভিড জীবাণুর সবচেয়ে বেশি মিউটেট হওয়া সংস্করণ। এর মিউেটশনের তালিকা এত দীর্ঘ যে একজন বিজ্ঞানী একে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। অন্য এক জন বিজ্ঞানী আমাকে বলেছেন, তার দেখা অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে ওমিক্রনই সবচেয়ে মারাত্মক।এই ভ্যারিয়েন্টটি মাত্রই তার যাত্রা শুরু করেছে, যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে এটি অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।এমুহূর্তে সবার মনে প্রশ্ন: ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কত দ্রুত ছড়াতে পারবে, এটি কি ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে ভেদ করতে পারবে? তেমন হলে এর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যাবে?এসব প্রশ্ন নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে, কিন্তু এর কোন পরিষ্কার জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।

ওমিক্রন সম্পর্কে আমরা এপর্যন্ত কী জানি?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ওমিক্রন। গ্রিক বর্ণমালার আলফা, ডেল্টার মতোই নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কোড-নেম ঠিক করা হয়েছে।এই ভ্যারিয়েন্টটি মিউটেট বা তার রূপ পরিবর্তন করেছে অনেকভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি “অনেক অস্বাভাবিকভাবে মিউটেট” করেছে এবং এখন পর্যন্ত অন্য যেসব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে তার চেয়ে এটি “অনেকখানিই আলাদা।””এটা আমাদের খুব অবাক করেছে,” বলছেন তিনি, “বিবর্তনের জন্য এটা বড় বড় ধাপ পার হয়েছে। (কোভিড জীবাণুতে) আমরা সাধারণত যে ধরণের মিউটেশন দেখি এর মধ্যে সেটা অনেক বেশি।”

এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডি অলিভিয়েরা জানিয়েছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মিউটেট করেছে ৫০ বার। আর এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। মানুষের দেহের মধ্যে ঢুকতে কোভিড ভাইরাস এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। এবং করোনার ভ্যাকসিন সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়।ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইনে মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। সেই তুলনায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই পরিবর্তন হয়েছে মাত্র দু’বার।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ধরণের মিউটেশন সম্ভবত একজন রোগীর দেহের জীবাণু থেকে এসেছে, যিনি এই ভাইরাসের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি।তবে ভাইরাসের সব মিউটেশনই খারাপ না। এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে এসব মিউটেশনের ফল কী দাঁড়ায়।তবে শঙ্কার কথা হলো চীনের উহানে করোনার প্রথম যে জীবাণুটি দেখা গিয়েছিল তার তুলনায় এই ভাইরাস এখন অনেকখানিই ভিন্ন। এর মানে হলো, কোভিডের মূল স্ট্রেইনকে মাথায় রেখে তৈরি করা ভ্যাকসিন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নাও হতে পারে।কোভিডের অন্য সব ভ্যারিয়েন্টে যেসব মিউটেশন লক্ষ্য করা গেছে সেসব দিয়ে হয়তো এই ভ্যারিয়েন্টের ভবিষ্যৎ রূপান্তর সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, “এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা -এসব আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর রয়েছে।”

তবে কোভিডের অনেক ভ্যারিয়েন্ট গবেষণাগারে বিপজ্জনক বলে মনে হলেও পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সবাই দুর্ভাবনায় ছিলেন। কারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে এর কোন জুড়ি ছিল না। কিন্তু পরে দেখা গেল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়েও দ্রুত গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।”বেটা ভ্যারিয়েন্ট শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করতে পারতো। আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল বেশি। আর ইমিউন সিস্টেমকে এড়াতেও পারতো মোটামুটি,” বলছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা, “কিন্তু এটা (ওমিক্রন) দুই দিক থেকেই সমান পারদর্শী।”গবেষণাগার থেকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে ঠিকই, কিন্তু এর সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন রয়েছে তার জবাব মিলবে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে।

এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে এখনই কোন উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না। কিন্তু যেসব ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গটেং প্রদেশে। বোতসোয়ানায় পাওয়া গেছে চারটি কেস। এবং হংকংয়ে পাওয়া গেছে একটি কেস। ইসরায়েল এবং বেলজিয়ামেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।এই ভাইরাসটি যে আরো অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সে সম্পর্কেও কিছু সূত্র পাওয়া যাচ্ছে।কোভিডের সাধারণ পরীক্ষায় এই ভ্যারিয়েন্টের ফলাফল কিছুটা বিচিত্র দেখতে হয়, ল্যাবরেটরির ভাষায় যাকে বলে ‘এস-জিন ড্রপ আউট’। ফলে এই বৈশিষ্ট্যে জন্যই পূণার্ঙ্গ জিন বিশ্লেষণ না করেও হয়তো এটি কীভাবে, কোথায় ছড়িয়ে পড়ছে সেটা জানা সম্ভব হবে।

এর অর্থ দাঁড়ায় গটেং প্রদেশের ৯০% রোগীর দেহে সম্ভবত এই ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে এবং “দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য প্রদেশেও” হয়তো এটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও এটি বেশি দ্রুততায় ছড়ায় কিনা, এর সংক্রমণের প্রভাব কতটা মারাত্মক কিংবা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এটি ভেদ করতে পারে কিনা সে সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য জানা যাচ্ছে না।দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ২৪% কোভিড টিকার আওতায় এসেছে। এর চেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে যেসব দেশে সেখানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আদৌ ছড়িয়ে পড়বে কিনা, সেই প্রশ্নেরও কোন জবাব হাতে নেই।ফলে এখন পর্যন্ত যেটুকু আমরা জানি তা হলো এর সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা অনেক কম, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য দেখে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এবং গভীরভাবে এর ওপর নজর রাখতে হবে।তবে করোনা মহামারির একটা বড় শিক্ষা হলো: সব প্রশ্নের জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করার মতো যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015 teamreportbd
কারিগরি সহযোগিতায়: Freelancer Zone
freelancerzone