স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল হাইস্কুলে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হবে।এর আগেই সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, শিশুদের শুধু ফাইজারের টিকা দেয়া হবে।স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ শামসুল হক অধিদফতরের সাপ্তাহিক বুলেটিনে জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার আটটি স্কুলে টিকা দেয়া হবে।
মি. হক জানিয়েছেন, ঢাকা শহরের আটটি স্কুলকে ‘ক্লাসটার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ২৫টি করে বুথ থাকবে।স্কুলগুলো হচ্ছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা অবস্থিত হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, গুলশানের চিটাগাং গ্রামার স্কুল, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, ধানমণ্ডির কাকলী স্কুল, উত্তরার সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।তিনি জানিয়েছেন, “এই স্কুলগুলো নিজেদের বাচ্চাদের টিকা দেবে এবং আশপাশের স্কুলগুলোর বাচ্চাদেরও টিকা দেবে।”এই স্কুলগুলোকে কেন নির্বাচন করা হল সেটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, “ফাইজারের টিকা খুব টেম্পারেচার সেনসিটিভ। এই ভ্যাক্সিনটি যে কেন্দ্রে, যে বুথে দিতে হয়, সেগুলো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। এই টিকা তৈরি করার জন্য যে ডাইলুয়েন্ট বা দ্রাবক লাগে, সেটিও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। এই বিষয় বিবেচনায় করে যেখানে আমাদের এই সুযোগ আছে, সেই স্কুলে আমরা একসাথে ২৫টি করে বুথ স্থাপন করতে চাই।”
তবে সোমবারই সবগুলো স্কুলে টিকা দেয়া শুরু হচ্ছে না। এতে দুই একদিন দরকার হতে পারে।তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকায় দিনে পাঁচ হাজারের মতো শিশুকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরে সেটি দেশব্যাপী দৈনিক ৪০,০০০ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।ঢাকার বাইরে ২২ টি জেলায় এখন এই টিকা কর্মসূচি সম্প্রসারণের প্রস্তুতি চলছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রথম দফায় টিকা পাবে ৩০ লাখ শিশু। তাদের দুই ডোজ দেয়ার জন্য ফাইজারের ৬০ লাখ ডোজ সংরক্ষিত রয়েছে।এরপর ফাইজারের টিকার সরবরাহের উপরে নির্ভর করবে এই বয়সী শিশুদের টিকা কর্মসূচি কিভাবে দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা যাবে।তবে নির্দিষ্ট তাপে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কারণে অন্যান্য জেলায় টিকা দেয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে এই মাসের মাঝামাঝি সময় ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাউশি।অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ৮০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সোয়া ছয় লাখের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে।এর মধ্যে এখনো পর্যন্ত চার লাখের মতো শিশুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো হয়েছে।টিকার তথ্য ভাণ্ডারে এই তথ্য যোগ হওয়ার পর সুরক্ষা সাইটে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয়। সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী রয়েছে এক কোটি ২৫ লাখের কিছু বেশি।
কোভিড টিকার জন্য নির্ধারিত সুরক্ষা ওয়েবসাইটে ১২-১৭ বছর বয়সীদের জন্য আলাদা ট্যাব চালু করা হয়েছে। সেখানে জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাচ্ছে।এখনো পর্যন্ত কত শিশু সুরক্ষায় নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে সেই তথ্যটি জানা যায়নি।ঢাকার মিরপুরের একজন বাসিন্দা ফারহানা আক্তার তার ১৩-বছর বয়সী ছেলের স্কুলে জন্ম নিবন্ধন সনদের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।তিনি বলছেন, “আমার কাছে মনে হয় আমাদের বাচ্চারা বর্তমানে যে ধরনের জীবন যাপন করছে, ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতটা ভাল না। এই টিকার বিষয়টা নিয়ে একটা ভয় ছিল। কিন্তু আমরা যখন বড়রা টিকা নিয়েছি, আমারা ঠিক আছি। আমার কাছে মনে হয় নিশ্চয়ই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওইভাবেই ডোজটা নির্ধারণ করা হয়েছে।”করোনায় ওরা বাসায় থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে যেরকম বিপর্যস্ত, আমরা চাচ্ছি ওদের সবকিছু আবার শুরু হোক, জীবনটা স্বাভাবিক হোক।”ফারহানা আক্তার অবশ্য বলছেন, টিকা কোথায়, কিভাবে পাওয়া যাবে সেনিয়ে কোন ধরনের বিস্তারিত তথ্য তিনি এখনো পাননি।স্কুলে একটি ফর্ম পূরণ করার পরও সুরক্ষা ওয়েবসাইটে গিয়েও যে আবার নিবন্ধন করতে হবে সেই তথ্যটিও তার জানা নেই।