বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া কপিরাইট আইন ২০২১, নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।কপিরাইট আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।আগের আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল।কর্তৃপক্ষ বলছে, এই আইন বাস্তবায়ন জোরদার করার জন্য টাস্কফোর্স গঠন এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।এদিকে চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সঙ্গীত শিল্পীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তবে বাস্তবায়ন সঠিক ভাবে হবে কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দু’হাজার সালে বাংলাদেশে কপিরাইট সংক্রান্ত যে আইন করা হয় সেখানে লোক সংস্কৃতি এবং লোক জ্ঞান সম্পর্কে কোন বিধান ছিল না।কিন্তু কপিরাইট আইন ২০২১ যেটা মন্ত্রীসভায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে সেখানে আলাদা একটা অধ্যায় রাখা হয়েছে লোকজ ঐতিহ্য সম্পর্কে।এই আইনে নতুন কী রয়েছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের কপিরাইট অফিসের-রেজিস্টার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী বলেন এবারের আইনে শাস্তি বাস্তবায়নের উপর বেশ জোর দেয়া হয়েছে।”বর্তমান আইনে এনফোর্সের কোন বিধি-বিধান ছিল না। বিধান ছিল শাস্তির। কিন্তু এই শাস্তিটা প্রয়োগ করতে হলে কোর্টে যেতে হত। আমরা বিভিন্ন দেশের আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্স এবং মোবাইল কোট পরিচালনা করার বিধান রেখেছি” বলেন মি. চৌধুরী।
আইনে বলা হয়েছে যে কোন শিল্পকর্ম প্রথম প্রকাশের পর ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকবে।তবে তাকে কপিরাইট অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তার শিল্পকর্মে।তা না হলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। এদিকে শাস্তির বিধান সবচেয়ে বেশি রাখা হয়েছে সিনেমার ক্ষেত্রে।পরিচালকের অনুমতি ছাড়া সিনেমা কপি বা নকল করলে আগে চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল।কিন্তু নতুন আইনে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল এবং ৫লক্ষ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অপরাধী উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক মালেক আফসারি ২০০০ সালের কপিরাইট আইনের কথা উল্লেখ করে নতুন এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন “আমি একটা কাজ করলাম, আমার একটা সৃষ্টি অন্য একজন চুরি করে নিয়ে যাবে বা কপি করে টাকা রোজগার করবে এটাতো হতে পারে না। আইনটা শক্তভাবে করা উচিত ছিল আগেই। করা হয়েছে এখন।
“কিন্তু আমাদের দেশে একটা সমস্যা- আইন যতই শক্ত হোক মানুষ একটা ফাঁক খুঁজে বের করে।এবং ধরা পরলেও বের হয়ে আসে।অতীতেও এমন হয়েছে। আমারতো শতভাগ শঙ্কা আছে এটার বাস্তবায়ন নিয়ে”।আগের আইনে সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্পকর্ম ও সাউন্ড রেকর্ডিং- কপিরাইট আইনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় ছিল।কর্তৃপক্ষ বলছে সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য বেশ কিছু বিষয় কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।সঙ্গীতশিল্পী দিলসাদ নাহার কনা নতুন এই খসড়া আইন নিয়ে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
“একটা গান যে লেখে সেটা তার সম্পদ, যে সুর করে সেটা তার সম্পদ। এখন যদি এটা (আইন) হয়ে থাকে তাহলে-যার যার সম্পদ তার তার কাছে থাকলো। এটা ডেফিনেটলি ভালো একটা ব্যাপার। সরকার নিশ্চয় যোগ্য মানুষদের নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতদিন পর এসে,” মন্তব্য করেন তিনি।আগের ঐ আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে ক্রিয়েটিভ কাজে যারা জড়িত আছেন তারা অনেক সমালোচনা করেছিলেন।নতুন এই খসড়া আইন যখন সংসদে পাশ হবে তখন যাতে সেটা শিথিলভাবে বাস্তবায়ন না করে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করেন সেই প্রত্যাশা করছেন।