মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১২:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশের প্রথম Smart Village প্রবেশ গেইট এর শুভ উদ্বোধন জাতীয় বীমা দিবসে লক্ষ্মীপুর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের মৃত্যুদাবীর চেক প্রদান পবিত্র শবে বরাত ৭ মার্চ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত প্রায় এক লাখ, মৃত্যু পৌনে চারশো নিজের নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী মিরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান পাখির স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর ইউসিসিএল’র সভাপতি ও বিআরডিবি’র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাওয়া ২৪ কোটি টিকা নিয়ে কি করবে ধনী দেশ গুলো !

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৯২ Time View

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে পৃথিবীর ৭০ ভাগ মানুষকে কোভিডের টিকা দেবার অঙ্গীকার করেন। কোভিডের টিকা আবিষ্কার হবার পর থেকেই বিশ্বের ধনী দেশগুলো নিজেদের জন্য বিপুল পরিমাণ টিকা কিনে মজুত করে রেখেছিল – যার পরিমাণ তাদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। আশংকা করা হচ্ছে, এর এক বিরাট অংশই হয়তো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হবে।এ বছর গ্রীষ্মকালে বাহার তার নিজ দেশ ইরানে যাবার জন্য বিমানে উঠেছিলেন। চার বছর পর এই প্রথম তার বাবার সাথে আবার দেখা হবে – এই ভাবনায় উন্মুখ ছিলেন তিনি।কিন্তু সে সময় তার কোন ধারণাই ছিল না – করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ কীভাবে তার পরিবার এবং গোটা দেশকেই ছিন্নভিন্ন করে দেবে।প্রথমে আক্রান্ত হন তাদের এক পারিবারিক বন্ধু – যিনি তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মারা গেলেন।তার পর গেলেন বাহারের পিতার চাচা, আর একজন বৃদ্ধ চাচী।বাহারের তখন দুশ্চিন্তা দেখা দিল তার দাদীকে নিয়ে – তিনি মাত্র এক ডোজ টিকা নিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

বাহারের বয়স ২০ এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন। তিনি এপ্রিল মাসে কোভিডের টিকা নিয়েছেন।তিনি নিজে সুরক্ষিত জেনেও যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আগের কয়েকদিন তার বাবার বাড়িতেই ছিলেন অন্য কোথাও যাননি। কিন্তু সব সময়ই তার এই চিন্তা ছিল যে ভাইরাস এর পর কাকে আক্রমণ করবে।ইরান এমন একটি দেশ যেখানে খুব কম লোকই করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছেন – কারণ সরবরাহ খুবই কম। বাহারের পরিবারের মাত্র অল্প কয়েকজন সদস্য টিকা নিয়েছেন।

বেঁচে থাকার অপরাধবোধ

যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার ক’দিন পরই তিনি জানতে পারলেন, তার বাবা অসুস্থ। এত দূর থেকে তিনি খুবই ভীত হয়ে পড়লেন।”এটা হচ্ছে অনেকটা নিজে বেঁচে যাবার অপরাধবোধ” – বলছিলেন বাহার, “আমি দুই ডোজ ফাইজারের টিকা নেবার ফলে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ইরান ত্যাগ করেছিলাম।”বাহারের পিতা সেরে উঠেছিলেন, তবে তারা অন্য অনেক বৃদ্ধ আত্মীয় মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা জানার পর তার মনে অপরাধবোধ সৃষ্টি হয়েছে।

বিরাট অসাম্য

টিকার ক্ষেত্রে পৃথিবীতে এখন যে অসাম্য পরিসংখ্যানে ফুটে ওঠে – তা বিরাট।পৃথিবীর অর্ধেকের সামান্য বেশি লোক এখনো এক ডোজ টিকাও পন নি।হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, পৃথিবীতে যত কোভিড টিকা উৎপাদিত হয়েছে তার ৭৫ শতাংশই গেছে মাত্র ১০টি দেশে।ইকনোমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট হিসেব করে দেখেছে – এখন পর্যন্ত উৎপাদিত ভ্যাকসিনের অর্ধেকই গেছে পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশের কাছে।বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোতে টিকা দেয়া হয়েছে দরিদ্র দেশগুলোর চাইতে ১০০ গুণ বেশি।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি টিকা

জুন মাসে জি-সেভেন গোষ্ঠীর সাতটি দেশ – কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র – অঙ্গীকার করে যে আগামী এক বছরে দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দান করা হবে।”আমি খবরটা দেখে হেসেছিলাম। আমি এরকম অনেক দেখেছি, আমি জানি এটা কখনো হবে না” – বলেন ইকোনমিক ইনটেলিজেন্সের আগাথা ডেমারাইস, সাবেক কূটনীতিক ও টিকা সরবরাহ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টের প্রণেতা।যুক্তরাজ্য অঙ্গীকার করেছিল তারা দেবে ১০ কোটি টিকা, এখন পর্যন্ত তারা ৯০ লক্ষেরও কম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন তিনি ৫৮ কোটি টিকা দান করবেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত দিয়েছে ১৪ কোটি। আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২৫ কোটি টিকা দেবার কথা বললেও এখন পর্যন্ত সরবরাহ করেছে তার মাত্র ৮ শতাংশ।ইরানের মত অনেক মধ্য আয়ের দেশ কোভ্যাক্স থেকে টিকা কিনেছে – যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থিত একটি উদ্যোগ। কোভ্যাক্স মধ্য আয়ের দেশগুলোর কাছে কম দামে টিকা বিক্রি করবে, এবং দরিদ্র দেশগুলোকে বিনামূল্যে দান হিসেবে দেবে – এটাই ছিল পরিকল্পনা।

২০২১ সালে কোভ্যাক্সের পরিকল্পনা ছিল ২০০ কোটি টিকা সরবরাহ করা, যা আসার কথা ভারত থেকে। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক চেহারা নেবার পর ভারত সরকার টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।টিকা সরবরাহে এই গুরুতর বিঘ্নের পর কোভ্যাক্স মূলত ধনী দেশগুলোর দানের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু সরবরাহের গতি অত্যন্ত ধীর। কোভ্যক্সের টিকা পাওয়া কিছু দেশ এখনো তাদের জনসংখ্যার ২ শতাংশকেও টিকা দিতে পারেনি।কোভ্যাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওরেলিয়া এনগুয়েন বলছেন, “বর্তমানে খুব কম পরিমাণে টিকা শেয়ার হচ্ছে, এবং তাদের যে সময় সীমা অর্থাৎ এক্সপায়ারি ডেটের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে – সেই সময়সীমাটাও ছোট। ” এ কারণে টিকাগুলো একটা দেশে পাঠানোর কাজটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে তিনি বলছেন।এয়ারফিনিটি নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, এটা সারা বিশ্বের সরবরাহ সমস্যা নয়। ধনী দেশগুলো তাদের হাতে অতিরিক্ত টিকা মজুত করে রাখছে। টিকা উৎপাদদনকারীরা এখন প্রতিমাসে দেড়শ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করছে, এবং এ বছরের শেষ নাগাদ ১১০০ কোটি টিকা উৎপাদিত হবে।এয়ারফিনিটির গবেষক ড. ম্যাট লিনলি বলছেন, “তারা বিপুল পরিমাণ টিকা উৎপাদন করছে এবং গত তিন-চার মাসে উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।”এর ফলে সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর হাতে ১২০ কোটি ডোজ টিকা থাকবে যা – বুস্টার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও – তাদের আসলে দরকার হবে না।

ড. লিনলি বলছেন, এই টিকার প্রায় এক পঞ্চমাংশ – ২৪ কোটি ১০ লাখ টিকা – এখন ফেলে দেবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে – যদি না তাদের অতি শীঘ্র অন্য দেশগুলোকে দান করা হয়।এমন সম্ভাবনা আছে যে দরিদ্র দেশগুলো এসব টিকা গ্রহণ করবে না- যদি না এগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ হবার আগে অন্তত দুই মাস সময় থাকে।ড. লিনলি বলছেন, “ধনী দেশগুলো লোভের কারণে এত টিকা কিনে রেখেছিল এটা আমি মনে করি না, আসলে কোন টিকায় কাজ হবে তা তখন তারা জানতো না, ফলে তারা কয়েক রকম টিকা কিনতে বাধ্য হয়েছিল।”তবে এয়ারফিনিটি বলছে, এখন টিকা উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি যেরকম – তাতে অতিরিক্ত টিকার মজুত করে রাখার কোন দারকার নেই। বরং তারা সেই অতিরিক্ত টিকা অন্য দেশকে দান করে দিতে পারে।আগাথা ডেমারাইস মনে করেন, কিছু দেশ টিকা দান করে দিতে চাইছে না এর পেছনে রাজনৈতিক চাপও একটা কারণ। “সরকার টিকা দান করে দিচ্ছে এটা দেখে ভোটারদের একটি অংশ নাখোশ হতে পারে, কারণ অনেকে মনে করে এ টিকা দেশে দরকার হতে পারে। “

কোভ্যাক্সের অরেলিয়া এনগুয়েন বলছেন, সরকার ছাড়া অন্যদেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব আছে।”আমরা চাই টিকা উৎপাদনকারীরা কোভ্যাক্সের কাছে যে অঙ্গীকার করেছে তা পূরণ করুক। যেসব দেশ ইতোমধ্যেই যথেষ্ট টিকা পেয়ে গেছে, তাদের সাথে করা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির চাইতে তাদের উচিত কোভ্যাক্সকে অগ্রাধিকার দেয়া।”তিনি প্রশ্ন তুলছেন, উৎপাদনকারীরা যদি প্রতি মাসে দেড়শ’ কোটি টিকা উৎপাদন করে তাহলে দরিদ্র দেশগুলোতে এত কম টিকা পৌঁছাচ্ছে কেন?তার মতে, যেখানে কোভ্যাক্সের প্রয়োজন বেশি – সেখানে সরকারগুলোর উচিত তাদের জন্য পথ ছেড়ে দেয়া, যাতে তারা দ্রুত টিকা পেতে পারেন।বাহার এবং তার পরিবারের জন্য এই টিকা শুধু একটা সংখ্যা নয় – এক একটি মানুষের জীবন, তার বন্ধু এবং আত্মীয়দের জীবন ।কয়েকদিন পর পরই তিনি পরিচিত কারো না কারো মারা যাবার খবর পাচ্ছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বন্ধুরা টিকা নিতে চায় না তাদের সাথে বাহার আগে তর্ক করতেন, কিন্তু এখন তিনি আর করেন না – কারণ তার জন্য এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।”যার টিকা নেবার সুযোগ আছে, সে তা কাজে লাগাচ্ছে না এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন” – বলেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015 teamreportbd
কারিগরি সহযোগিতায়: Freelancer Zone
freelancerzone