মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে শাহবাগ থানা থেকে পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতে নেওয়া রোজিনা ইসলামকে। তার স্বামী মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। সরকারি নথি চুরির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ তিনটি ধারায় সোমবার রাতে ডিএমপির শাহবাগ থানায় রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে রোজিনা ইসলামকে প্রায় ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। রাত ৯টায় তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, সোমবার বিকেল ২ টা ৫৫ মিনিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে রোজিনা ইসলাম নামীয় একজন নারী প্রবেশ করেন। এ সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। উক্ত নারী দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ-পত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকোনো এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এ সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান দেখতে পান এবং তাকে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কি করছেন মর্মে জানতে চান। এ সময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় প্রদান করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমীন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো: সাইফুল ইসলাম ভূঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মো: মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এতে প্রতীয়মান হয় যে, ডকুমেন্টসগুলো তিনি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়/সংগ্রহ সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মাঝে প্রতিনিয়ত পত্র এবং ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। উক্ত নারী যেসকল নথিপত্রের ছবি তুলছিলেন তার মধ্যে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও ছিলো। এসকল তথ্য জনসমক্ষে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। উল্লিখিত কাগজপত্রসমূহ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে।
রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, রোজিনা একজন সৎ সাংবাদিক। বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ করার জন্য এর আগেও তাকে একাধিকবার নাজেহাল হতে হয়েছিল। এটিও তেমন কোনো ঘটনা হতে পারে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক মুক্তাদির রশিদ রোমিও বলেন, ‘আমরা সচিবালয়ে গিয়ে রোজিনাকে একটি কক্ষে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য রোজিনা ইসলামের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে বিষয়টির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’