বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশের প্রথম Smart Village প্রবেশ গেইট এর শুভ উদ্বোধন জাতীয় বীমা দিবসে লক্ষ্মীপুর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের মৃত্যুদাবীর চেক প্রদান পবিত্র শবে বরাত ৭ মার্চ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত প্রায় এক লাখ, মৃত্যু পৌনে চারশো নিজের নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী মিরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান পাখির স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর ইউসিসিএল’র সভাপতি ও বিআরডিবি’র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ওষুধের ভৌতিক দাম: দুই হাসপাতালে কেনাকাটায় অবিশ্বাস্য জালিয়াতি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১
  • ৩৭০ Time View

স্বাস্থ্য খাতের বহুমাত্রিক দুর্নীতির আরেক চিত্র বেরিয়ে এলো রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরকারি টাকায় ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যে ওষুধটি মাত্র ৯৪ পয়সায় কিনেছে, সেই একই কম্পানির একই ওষুধ (একই ডোজ) মুগদা হাসপাতাল কিনেছে ১৬ টাকা ১০ পয়সা দামে। ব্যবধান ১৫ টাকা ১৬ পয়সা। আবার ওই একই কম্পানির আরেকটি ওষুধ ঢাকা মেডিক্যাল কিনেছে প্রতিটি ২০ টাকা ৪০ পয়সা দামে কিন্তু মুগদা মেডিক্যাল কিনেছে ৯০ টাকা ২৫ পয়সা দামে। ব্যবধান ৬৯ টাকা ৮৫ পয়সা।

এ রকম শুধু একটি-দুটি ওষুধই নয়, ১৬টি ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে দামের এমন ভৌতিক ব্যবধান দেখা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা বিভাগের কাছে ধরাও পড়েছে বিষয়টি। ঘটনাটি গত অর্থবছরে হলেও চলতি অর্থবছরে এসে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যেভাবে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনে সরকারের প্রায় সোয়া কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে, তেমনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কম দামে কিনতে পারার কারণ নিয়েও আছে প্রশ্ন।

ওষুধ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘নানা ধরনের যোগসাজশ ও ব্যাবসায়িক কৌশলের ফলে একই ওষুধের দামে একেক প্রতিষ্ঠানে এমন আকাশ-পাতাল ব্যবধান দেখানো হয়। কোনো কোনো কম্পানি তাদের এক ওষুধ এক জায়গায় নামমাত্র দামে দিয়ে আরেক জায়গা থেকে হয়তো সেই টাকা তুলে নেয়। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা সরাসরি অনেকটা দর-কষাকষি করে কম্পানি থেকে কিনতে পারে, কিন্তু ঠিকাদারের মাধ্যমে কিনলে সেই সুযোগ খুব একটা থাকে না। সেখানে নানা অনৈতিক ব্যাপারস্যাপারও থাকে।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধ কম্পানি সরাসরি যখন ওষুধ বিক্রি করে, তখন সেটার মধ্যে এক ধরনের বিপণন কৌশল থাকে। কারণ ওই হাসপাতালের শত শত ডাক্তার তাঁদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও অনেক সময় ওই ওষুধ লিখে থাকেন। কম্পানিগুলো সেইভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নেয়। ফলে বাইরের ফার্মেসিতে খুচরা মূল্য হিসাবে ঠিকই বেশি দামে বেচাকেনা হয়।

তালিকা ধরে দেখা যায়, ট্যাবলেট বিসোপ্রোলল (১০ এমজি) প্রতিটি ঢাকা মেডিক্যাল কিনেছে মাত্র ৯৪ পয়সায়। অপসোনিন কম্পানির এই ওষুধ মুগদা হাসপাতাল প্রতিটি কিনেছে ১৬ টাকা ১০ পয়সায়।

৬০ হাজার পিস এই ওষুধে ঢাকা মেডিক্যালের তুলনায় মুগদা মেডিক্যালের কিনতে ৯ লাখ ৯ হাজার ৬০০ টাকা বেশি গেছে। একই কম্পানির ইনজেকশন প্যান্টোপ্রাজল (৪০ এমজি) ঢাকা মেডিক্যাল প্রতি অ্যাম্পুল ২০ টাকা ৪০ পয়সা দরে কিনলেও মুগদা হাসপাতালে ইনজেকশনটির প্রতিটি ৯০ টাকা ২৫ পয়সা দরে ২৫ হাজার পিস কিনেছে। এতে গচ্চা গেছে ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা।

ঢাকা মেডিক্যালে অপসোনিনের যে ওষুধ প্রতিটি মাত্র ৪৩ পয়সা দরে কেনা হয়েছে, সেই একই (ট্যাবলেট ব্যাকলোফেন-১০ এমজি) ওষুধ এসকেএফ কম্পানির প্রতিটি মুগদা হাসপাতাল কিনেছে সাত টাকা ৯৯ পয়সা দরে। ড্রাগ ইন্টারন্যাশালের সেফুরক্সিম+ক্লাভুলানিক এসিড (৫০০+১২৫ এমজি) জেনেরিকের প্রতি ট্যাবলেট ঢাকা মেডিক্যাল কিনেছে সাত টাকা ৯৩ পয়সায়। অন্যদিকে এসকেএফ কম্পানির একই ওষুধ মুগদা মেডিক্যাল ৪৯ টাকা ৯৮ পয়সা দরে চার হাজার পিস কিনে সরকারি এক লাখ ৬৮ হাজার ২০০ টাকা গচ্চা দিয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা মেডিক্যালের চেয়ে মুগদা হাসপাতালের বেশি কেনা আরো কিছু ওষুধের দাম দেওয়া হলো। ঢাকা মেডিক্যাল ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের অ্যামলোডিপাইন (+অলমেসার্টন মেডোজোমিল ৫/২০) ওষুধটি কিনেছে ৪৩ পয়সায়, কিন্তু মুগদা মেডিক্যাল অপসোনিনের একই ওষুধ কিনেছে আট টাকা দুই পয়সায়। ফলে গচ্চা গেছে প্রতিটির দাম সাত টাকা ৭৯ পয়সা হিসাবে পাঁচ হাজার ওষুধে ৩৮ হাজার ৯৫০ টাকা। এভাবে মুগদা হাসপাতাল ১০.৮০ টাকার সেফুরক্সিম+ক্লাভুনিক এসিড (৫০০+১২৫ এমজি) ৪৫.২৮ টাকায়, ৫৬ পয়সার ক্লোপিলডোগ্রেল (৭৫ এমজি) ১১.৯৮ টাকায়, ৫৫ পয়সার ফ্লুপেনটিক্সল ৫ টাকায়, ২.১৩ টাকার গ্লিক্লাজাইড ৬.৯৮ টাকায়, ৩০ পয়সার গ্লিমিপ্রাইড (১ এমজি) ৪.৪৮ টাকায়, ৩০ পয়সার গ্লিমিপ্রাইড (২ এমজি) ৭.৯৮ টাকায়, ৮৮ পয়সার লোসারটিল ৭.৯৮ টাকায়, দুই টাকার মেটফরমিন (৫০০) ৩.৯৮ টাকায়, ২.৫০ টাকা দামের মাইডাজোলাম ৯.৯৮ টাকায়, ৮০ পয়সার মন্টিলুকাস্ট ১৪.৯৮ টাকায়, ১.৪০ টাকার ভিটামিন বি+ ৪.৯৮ টাকায়, আট টাকার অ্যামিকাসিন সালফেট ১৬.০৪ টাকায়, ১৯.৪৮ টাকার ফ্লুক্লোক্সাসিলিন ৫০০ এমজি ৪৫.২৮ টাকায়, ৩৫ টাকার ফেন্টানিল ৩৯.৯৮ টাকায়, ২০.৯০ টাকার হাইড্রোকোর্টিসন ৫০.৯৮ টাকায়, ৩৬ টাকার ন্যালবুফিন ১০০ টাকায়, ৯.৪০ টাকার ক্লোট্রইজল ২৫ টাকায়, ৭০.৫০ টাকার পোভিডান ৯৯.৯৮ টাকায়, ৪৯ পয়সার ক্যালসিয়াম ++ ভিটামিন ডি ৩৬.৯৯ টাকায়, ৬২ পয়সার ট্যাবলেট অনডানসেট্রোন এইসিএল ৯.৯৮ টাকায়, ২২ টাকার এড্রিনালাইন ২৪.৯৮ টাকায়, ৮.৫৯ টাকার ক্যালসিয়াম গ্লুকোনাট ৯.১৬ টাকায়, ২০.৯০ টাকার হাইড্রোকেরিসন ১০০ এমজি ৫০.৩৪ টাকায়, ৬.৪৮ টাকার অনডানসেট্রোন ইনজেকশন ২৯.৯৮ টাকায় ও ৭০.৫০ টাকার গ্রোভিডান লোডাইন সলিউশন ৯৯.৯৮ টাকায় কিনেছে।

এই তালিকায় থাকা বেশির ভাগ ওষুধই অপসোনিন গ্রুপের তৈরি। আরো কয়েকটি কম্পানিরও ওষুধ রয়েছে। অতিরিক্ত দামে শুধু এই ১৬টি ওষুধ কেনার ফলে সরকারের এক কোটি ১৮ লাখ টাকা গচ্চা গেছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল রউফ খান বলেন, ‘সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলো তৃতীয় পক্ষ বা ঠিকাদারদের মাধ্যমে ওষুধ কিনে থাকে। সে ক্ষেত্রে কোনো ঠিকাদার যদি আমাদের কাছ থেকে কম দামে ওষুধ কিনে নিয়ে কোনো হাসপাতালে বেশি দামে বা ভিন্ন কোনো দামে সরবরাহ করে, সেখানে আমাদের কিছু করার বা জানার সুযোগ নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে আমরা যথন সরাসরি কোনো ওষুধ বিক্রি করে থাকি, সে ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে দিয়ে থাকি। কারণ আমাদের মার্কেটিং খরচ সেখানে কম হয়।’ তিনি বলেন, ‘তার পরও আমরা দেখব বিষয়টি কী হয়েছে বা দুটি সরকারি হাসপাতালের দামে কেন এত বেশি পার্থক্য হয়েছে।’

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এসব ওষুধ কেনা হয়েছে মুগদা হাসপাতালে, যেখানে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটি দরপত্র বৈধ ঘোষণা করে। ওই বৈধ দরপত্রের প্রতিষ্ঠান তিনটি—অরবিট ট্রেডিং, ইউরো ট্রেডিং ও গোল্ডেন ট্রেডিংয়ের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে এই তিনটি দরপত্র যোগসাজশ বা কারসাজি করে দেওয়া হয়েছে। ওই তিন প্রতিষ্ঠানেরই ঠিকানা এক, মালিকরা আপন ভাই এবং কাগজপত্রে হাতের লেখাও এক। আর তাঁদের যোগসাজশের কারণেই ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি। যদি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি দরপত্র দাখিল করত তবে তুলনামূলক কম দামে ওষুধ কেনা যেত এবং সরকারের এক কোটি ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩০ টাকা সাশ্রয় হতো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015 teamreportbd
কারিগরি সহযোগিতায়: Freelancer Zone
freelancerzone