অবৈধ সম্পদের উৎস গোপন করতে আংশিক বা পুরোটা এমন কোন বৈধ জায়গায় বিনিয়োগ করা হয় যাতে সে বিনিয়োগকৃত অর্থ বৈধ বলে মনে হয়। এ প্রক্রিয়ার নাম হলো মানিলন্ডারিং। যা একটি ফৌজধারী অপরাধ। দেশে মানিলন্ডারিং অর্থ পাচার সংক্লান্ত তদন্ত করে থাকে দুনীর্তি দমন কমিশন, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোড, মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থ্যা। ৭১ টিভি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত না আসার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক আইনে নানা ধরণের জটিলতা। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা। যদিও দুদক বলছে টাকা ফেরত আনতে এবং পলাতক পাচারকারীদের আটক করতে ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে সরকার।
তারা বলছেন, একক কোনো সংস্থ্যা অর্থ পাচারের তদন্ত না করাতে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আসার নজির খুব কম। ফেরত আসা টাকার মধ্যে ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরে বিএনপি চোয়ারপারসনের পুত্র কোকোর ২১ কোটি ফেরত আসে।
আইন বিশ্লেষক ইকতেদার আহম্মেদ বলেন, মানিলন্ডরিং তফসিলভুক্ত অপরাধ। এটা দায়রা জজ নিজে কিংবা অতিরিক্ত জজ কতৃক বিচার হয়ে থাকে।
দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, শুধু মাত্র ঘুষ এবং দুনীর্তির মাধম্যে অর্জিত সম্পদের যে লন্ডারিং সেটি দেখার দায়িত্ব শুধু দুদকের। দায়িত্বে থাকা সকল দপ্তর গুলো আরো কােঠার হলে পাচার ঠেকানো যেতো। প্রত্যাকে তাদের মামলা গুলোও যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয় তাহলেও অর্থনীতির উপর যে বিরুপপ্রভাব পরেছে সেগুলো রোধ করা সম্ভব হবে।
অগ্রনী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বলেন, টাকা কিভাবে যাচ্ছে, কেনো আনা যাচ্ছে না এগুলো যদি সঠিকভাবে তদন্ত না হয়, জবাবদিহিতার মধ্যে না আনা হয় তাহলে দেশ আরো ক্ষতির মুখে পরবে। টাকা ফেরত আনতে আমাদের অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি, অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা, একটা স্বচ্চতা , সৎইচ্ছা সঙ্গে জবাবদিহিতা থাকার দরকার।
দুদকের তথ্য মতে, পাচার হওয়া অর্থের পরিসংখ্যান
১. বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধার খাজা সোলায়মান ও তার স্ত্রী নওরীন হাবিব জনতা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ১২০০ কোটি টাকা।
২.বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম গংওদর বেসিক ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
৩.জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ জনতা ব্যাংক থেকে ৯৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচার।
৪.ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাচারের অভিযোগ।
৫.যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট ২ শ ১৯ কোটি টাকা।
৬.যুবলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ৫০ কোটি টাকা।
৭.ঢাকা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার টিপু সুলতান বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ৩৫০ কোটি টাকা।
৮.স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহিস্কৃত কর্মচারী আবজালের প্রায় তিনশ কোটি টাকা ।
৯.এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রধান প্রশান্ত কুমার হালদার ১০ হাজার দুই’শ কোটি টাকা ।
১০.সাবেক পররাষ্টমন্ত্রী মোরশেদ খান ও তার ছেলে ৩২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
১১. অ্যানটেক্স কর্ণধার ইউনুছ বাদল প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ।
১২.এমএম ভেজিটেবলসের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন ১ হাজার ৭৪৫ কেটি ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ।
১৩.এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক গংদের এবি ব্যাংকের ১৬১ কোটি টাকা দুবাইতে পাচারের অভিযোগ।
১৪.ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক নিবার্হী চেয়ারম্যান বাবুল চিশতি তার বিরুদ্ধে কয়েক’শ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ।
১৫. ভোলার সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম সিঙ্গাপুরে এক লাখ ৭৫ হাজার পাচারের অভিযোগ রয়েছে।