শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশের প্রথম Smart Village প্রবেশ গেইট এর শুভ উদ্বোধন জাতীয় বীমা দিবসে লক্ষ্মীপুর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের মৃত্যুদাবীর চেক প্রদান পবিত্র শবে বরাত ৭ মার্চ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত প্রায় এক লাখ, মৃত্যু পৌনে চারশো নিজের নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী মিরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান পাখির স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর ইউসিসিএল’র সভাপতি ও বিআরডিবি’র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার হাতিয়ার নারী নির্যাতন মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল
  • Update Time : রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৪০৭ Time View

জমি-জমা নিয়ে বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা, পরকীয়াজনিত কারণ, প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার পালিয়ে যাওয়ার পর উদ্ধারসহ প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কতিপয় সুবিধাভোগিরা দীর্ঘদিন থেকে হয়রানীর জন্য নারী নির্যাতনের মামলা করে আসছিলো। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নারী নির্যাতনের মামলাকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, দেশে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের অপরাধগুলো কঠোর শাস্তিবিধানযোগ্য। তাই এ আইনটির কঠোরতাকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি লাভের জন্য প্রতিপক্ষকে হয়রানীর উদ্দেশ্যে এসব মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
অতিসম্প্রতি বরিশাল আদালতে দায়ের করা নারী নির্যাতনের একটি মামলা নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে গোটা বরিশালজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনসহ প্রায় প্রতিদিনই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে আসছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য বৃহত্তর বরিশালের ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ এমাদুল হক মনিরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনে প্রশাসনের তালিকাভূক্ত এক ডাকাত ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির মেয়েকে দিয়ে বরিশাল আদালতে নাটকীয়ভাবে মামলা দায়ের করিয়েছেন।
সূত্রমতে, এমাদুল হক মনির রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী এ্যাডভোকেট মরহুম মোঃ ফজলুল হকের পুত্র। বেশ কিছুদিন যাবত মনিরকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিলো। চক্রটি কোনোভাবে সফল হতে না পেরে এবার জনপ্রিয় এই চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একটি মেয়েকে দিয়ে আদালতে ধর্ষন মামলা দায়ের করিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গত ২৯ আগস্ট বেলা এগারোটায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সততার সাথে আমি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে আমি সুনামের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এ্যাডভোকেট ফজলুল হক ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে দক্ষতার মাধ্যমে দলকে সু-সংগঠিত করেছেন। এছাড়াও তিনি (ফজলুল হক) অত্যন্ত সততার সাথে কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের একজন সফল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে নির্বাচন করেছেন।
এমদাদুল হক মনির বলেন, ১৯৭১ সাল থেকেই আমাদের পরিবার একের পর এক হয়রানীর শিকার হয়ে আসছে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর নিবেদিত সৈনিক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় পাকহানাদার বাহিনীরা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় আমাদের বাড়ি-ঘর জ¦ালিয়ে দিয়েছিলো। আমার বাবার রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমি বর্তমান সময়ে গোটা কাঠালিয়াকে মাদক, দূর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে গিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং কুচক্রী মহলের কতিপয় ব্যক্তির চক্ষুশুল হয়ে দাঁড়িয়েছি। ফলে ওই চক্রটি তাদের অসদ উদ্দেশ্য সফল করতে আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হয়রানির চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এলাকায় আমার রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওই চক্রটি ভিন্নকৌশলে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্রের অংশহিসেবে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভূক্ত আমুয়া ইউনিয়নের এক চিহ্নিত ডাকাতের মেয়েকে দিয়ে আমাকে সমাজে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য গত ২৫ আগস্ট একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করিয়েছে। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মিথ্যা মামলা রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার হাতিয়ার উল্লেখ করে এমদাদুল হক মনির বলেন, প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্রকারীরা যখন রাজনৈতিকভাবে আমাকে দমন করতে পারেনি তখনই নারীঘটিত কল্পকাহিনী বানিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রের বরাত দিয়ে মনির বলেন, মামলার এজাহারে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১ আগস্ট পর্যন্ত ওই নারীকে ধর্ষনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সর্বশেষ ১ আগস্ট ওই নারীর সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ১ আগস্ট আমি আমার স্ত্রীর বাবার বাড়ি অর্থাৎ শশুর বাড়ি ঢাকার শনিরআখরাতে ঈদ উদ্যাপন করি এবং গত ২০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমি ঢাকাতে অবস্থান করেছি।
প্রশ্ন রেখে এমদাদুল হক মনির বলেন, শুধু আমি নয়; কোন ব্যাক্তি যদি একটি মেয়েকে তিনবছর যাবত ধর্ষন করে তাহলে এই তিন বছরে মেয়েটি কোন অভিযোগ করেনি কেন? পাশাপাশি চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি আমি বিবাহ করি, সে সময়ও মেয়েটি কোন অভিযোগ করেনি কেন। এমনকি মামলার বাদি ওই মেয়েটি সাংবাদিকদের কাছে বলেছে, সে ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করে চাকরির জন্য আমার কাছে এসেছে। যাহা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। বর্তমানে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই মেয়েটি আমুয়া শহীদ রাজা ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এইচএসসি মানবিক শাখায় অংশগ্রহন করে অকৃতকার্য হয়েছে। অথচ বলা হয়েছে সে ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই মেয়েটির সাথে আমার যে ছবিটি প্রকাশ পেয়েছে তা একটি সালিশ বৈঠক শেষে স্থানীয় অসংখ্য গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মায়ের সাথে উপস্থিত ওই মেয়েটি আমার সাথে ছবি তোলার দাবি করেন। তখন আমি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। বিধায় একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তখন আমি আপত্তি করতে পারিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার রাজনৈতিক নির্বাচনী প্রতিপক্ষরা ওই মেয়েটিকে ষড়যন্ত্রের বুলেট হিসেবে ব্যবহার করছে। মামলার বাদি ওই মেয়েটির বাবা একজন চিহ্নিত ডাকাত ও সাজাপ্রাপ্ত পালাতক আসামি বলেও চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা॥ জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনিরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মদদে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বমহলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে। মামলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাহারের দাবিতে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার মানুষের অংশগ্রহনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনে পৃথকভাবে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অনতিবিলম্বে এমাদুল হক মনিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়।
সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে দীর্ঘ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নেতৃবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালীন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান উজির সিকদারের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুন কুমার কর্মকার, জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও পৌর কাউন্সিলর রেজাউল করিম জাকির, আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আবু জাফর প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চাকরি দেওয়া এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজী ডেকে কাগজে সই নিয়ে বরিশাল শহরের একটি বাসায় নিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের অভিযোগে বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এক নারী। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও সহযোগিতার অভিযোগে মিঠু সিকদার নামের আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015 teamreportbd
কারিগরি সহযোগিতায়: Freelancer Zone
freelancerzone