প্রয়াত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, ছাত্রজীবন থেকে সাহারা খাতুনের সঙ্গে তার পরিচয়। একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে ফিরে এসে যাদেরকে সবসময় পাশে পেয়েছেন তাদের একজন ছিলেন সাহারা খাতুন। প্রয়াত এই নেত্রীর অবদান কখনো ভুলবার মতো নয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের শুরুর দিনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। এদিন সাহারা খাতুনসহ সংসদে বিশিষ্টজনদের ওপর শোক প্রস্তাব পাস হয়।
সাহারা খাতুনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি ছিলেন সাহসী, সৎ ও দেশপ্রেমিক। ছাত্রজীবন থেকেই তার সঙ্গে পরিচয়। উনসত্তরের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। যারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন তাদের একজন তিনি। আন্দোলন-সংগ্রামে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।’
আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে সাহারা খাতুন বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায়, তখনও তার ওপর নিপীড়ন হয়েছে। পিটিয়ে ডাস্টবিনে পর্যন্ত ফেলে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তো সীমাহীন অত্যাচার হয়েছে। একদিকে পুলিশ অন্যদিকে ছাত্রদল এই অত্যাচার চালিয়েছে।’
একজন আইনজীবী হিসেবে আইনজীবীদের সংগঠিত করা, দলের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে সাহারা খাতুনের বিশাল ভূমিকা ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাগুলো তিনি চালাতেন বলেও জানান দলের সভাপতি। বিভিন্ন সময় নিজের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেগুলোও সাহারা খাতুন পরিচালনা করতেন বলে জানান শেখ হাসিনা। বিশেষ করে এক-এগারোর সরকারের সময় তিনি যখন কারাগারে ছিলেন তখন সাহারা খাতুনের ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় সাহারা খাতুন ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তার ভূমিকার প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘বিডিআরের ঘটনার পর সাহারা আপা সাহসের সঙ্গে গিয়ে জওয়ানদের অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করেন। আর্মি অফিসারদের পরিবারকে রক্ষা করেন। নিজের প্রাণ বাজি রেখে তিনি তা করেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। কঠিন সময়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগসূত্রতা টেনে বিএনপি যে অভিযোগ করে তা প্রত্যাখ্যান করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার মাত্র ৫২ দিনের মাথায় এই ঘটনা ঘটে। ক্ষমতায় এসেই আমরা এমনটা ঘটাবো এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। এছাড়া এই ঘটনায় যে সেনা অফিসাররা মারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৩৩ জন আওয়ামী লীগের পরিবারের। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সেনা অফিসারদের রক্ষা করা। এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারেনি, যারা ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করেছিল তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিন না একদিন সত্যটা বের হবে।’
এ সময় বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাদের মিথ্যা বলায় একটা আর্ট আছে।’
‘ইসরাফিল এতো অল্প বয়সে চলে যাবে ভাবতে পারিনি’
শোক প্রস্তাবের সমাপনী আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলমের কথাও স্মরণ করেন। বলেন, ‘এতো অল্প বয়সে সে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। তার করোনা হয়েছিল, ভালোও হয়েছিল। কিন্তু কিডনির সমস্যা ছিল।’ এ সময় তিনি ইসরাফিল আলমের প্রশংসা করে জানান, বেঁচে থাকলে জাতি একজন বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান পেতো। ইসরাফিল আলম অনেক মেধাবী সাংসদ ছিলেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই করোনাকালে আমরা অনেক নেতাকে হারিয়েছি। মূলত জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। ইসরাফিলও জনগণের পাশে ছুটে গিয়েছিলেন।’