দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন নেই। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার খুব ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউএনও ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীকাল সকালে তার ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ শেষ হবে। এখনো ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা যায়নি। দোয়া করি, ইনফেকশন যেন না হয়। আমি নিজ চোখে দেখে আসছি, রোগী সুন্দর ব্যবস্থাপনায় আছে এবং সবকিছু ভালোভাবে চলছে। প্রয়োজনে রোগীর চিকিৎসার যা দরকার সব দেয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন রোগী যে পর্যায়ে আছে তাতে বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় তখন সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে উনি এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছেন। উনার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে আটজন ডাক্তার আড়াই ঘণ্টা সফলতার সাথে অপারেশন করেছেন। উনার ডান দিকের অংশটা এখনো অবশ আছে। ডাক্তাররা বলেছেন ফিজিক্যাল থেরাপি এবং সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে এটা ভালো হয়ে যাবে। এরকম একটা জটিল পেশেন্টকে সফলতার সঙ্গে আমাদের নিউরো সায়েন্সেস চিকিৎসা দেয়ায় আমরা গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ রোগী সম্পর্কে সবসময় খবর রাখছেন।’
‘মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ ৫-৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক’
এদিকে সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের খোঁজখবর নিতে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ ১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন৷ আমরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন এদের মধ্যে পাঁচ-সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তাদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ দগ্ধদের প্রায় সবারই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে৷ তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়েছে৷ যার কারণে কেউই এখন পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত নন৷’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক দগ্ধদের খবর নিচ্ছেন৷ আহতদের সঠিক চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন৷’
মন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে৷ তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে৷ যদি কারো গাফিলতি পাওয়া যায়, তার বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’
ঢাকার বাইরে বার্ন ইউনিট গঠনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এ বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে৷ তবে আমাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে৷’
যারা দগ্ধ হয়েছেন কিংবা মারা গেছেন তাদেরকে কোনো অনুদান দেয়া হবে কি না এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।’
আইনত পদক্ষেপ কী নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে একটি মামলা হয়েছে এবং সেই মামলায় অবহেলাজনিত যে যে ধারা আছে সেই ধারায় মামলা হয়েছে। মামলাটি ফতুল্লা থানায় হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
মামলায় আসামি কাদের করা হয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আসামিদের এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়নি, অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক। যদি কারো সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’