পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় তার কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতেই ২১ আগস্ট সমাবেশে গ্রেনেড হামলা। ১৫ আগস্টের ‘মূল কুশীলব’ জিয়াউর রহমানের ধারাবাহিকতায় জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড হয় বলে মনে করেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনা বিছিন্ন নয়। ৭১’র সেই পরাজিত শক্তি ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করলেন। এরপর দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শুরু হল। ৭৫’র দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। খুনিরা সেই অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে। এ হামলা ছিল জোট সরকারের মদদে ও ছত্রছায়ায়। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল, যাতে ১০০ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারে। এমনকি গ্রেনেড হামলার পর সংসদে কথা বলার সুযোগও ছিল না। আলোচনার সুযোগ দিলে যদি তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদও বলেন, ৭৫’র ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনা ‘একইসূত্রে গাঁথা’। ১৫ আগস্ট মূল কুশীলব মোশতাক-জিয়া গং। সেদিন বঙ্গবন্ধু ও পরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে তারা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। সেটির অনুমোদন দিয়েছে খালেদা জিয়া আর পরিচালনা করেছে জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান। অর্থাৎ দুটি হত্যাকাণ্ড একইসূত্রে গাঁথা।
আওয়ামী লীগের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ২১ আগস্টের হামলার পুরো ঘটনা হয়েছিল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সফল পরিকল্পনা করা সম্ভব ছিল না। তারেক জিয়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, পিন্টুসহ অনেক নেতার নাম আসে। কিন্তু তারা কি খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করা ছাড়াই এসব করেছে? বাবর তো ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া নিজেই। খালেদা জিয়াও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সর্বোচ্চ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও শুরা কমিটির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি-জামায়াত জোটই মদদ দিয়েছিল। ৭৫’র খুনিদের যেমন জিয়াউর রহমান নানাভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন, বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তেমনিভাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানও তাদের দেশের বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন।
গত সোমবার রাতে ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদের উত্থান’ শিরোনামে এক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।
সাবেক ছাত্র নেতা সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষী (অব.) মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন।