নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্থগিত চলতি বছরের এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানের জন্য কবে নাগাদ পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া জরুরি। তবে পরিস্থিতির অনিশ্চিয়তায় সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া সম্ভব না হলেও একাধিক পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী সর্বসমক্ষে তথ্য প্রকাশ করা প্রয়োজন। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে যে হতাশা তৈরি হয়েছে তা কেটে যাবে এবং তারা আবার মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অংশ নিতে পারবে। তবে পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
মঙ্গলবার বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় দৈনিক বাংলাদেশের আলো’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা এমন মতামত ব্যক্ত করেন। রাজধানীর মহাখালীতে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল খান সময়োপোযোগী এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আলোচনায় অংশ নেন। ‘চলমান সংকট সমাধানের জন্য অতিদ্রুত একটি পথ খুঁজতেই এই আলোচনা সভার আয়োজন’ মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান খান বাবু। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট কবি ও লেখক এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও ভর্তি বিভাগের উপ-পরিচালক দীপ্তি সরকার।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ড. আবু তাহের, সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আমিরুল আলম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মকবুল হোসেন, ইউনিসেফের সাবেক জাতীয় পরামর্শক ও ডিজিএইচএসের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক ড. বেনজির আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন, দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার এবং বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব । এছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশের বেশ কিছু স্বনামধন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও সংকট সমাধানে অনুষ্ঠানে তাদের মতামত তুলে ধরেন। অধ্যক্ষবৃন্দ হচ্ছেন – বনমালী মোহন ভট্টাচার্য, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা, এম.এ.কালাম, গুলশান কমার্স কলেজ, ঢাকা , বিল্লাল হোসেইন, আইডিয়াল কমার্স কলেজ, ঢাকা, হাসান ইমাম মজুমদার, অজিত গুহ কলেজ, কুমিল্লা, আবু ছালেক মো. সেলিম রেজা সৌরভ, সোনার বাংলা কলেজ, কুমিল্লা, মশিউর রহমান মৃধা, ইনডিপেন্ডেন্ট কলেজ নরসিংদী, মো. রেজাউল করিম, কাজীপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজ, সিরাজগঞ্জ, সাইদুর রহমান, দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজ আটঘড়িয়া,পাবনা, সুলতান মাহমুদ খান, জামালপুর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, জামালপুর।
সৃষ্ট সংকট সমাধানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক পরামর্শও দেন। এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে- বোর্ডভিত্তিক আলাদা দিনে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা; পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়িয়ে নতুন করে আসন বিন্যাসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা; পরীক্ষার সংখ্যা কমানো ইত্যাদি। পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে যথাশীঘ্র সম্ভব এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণের উপরও গুরুত্ব প্রদান করেন অনেক আলোচক। বক্তাদের নানা মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট ঘোষণার বিষয়ে এখনই কোনো বক্তব্য দেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘কবে পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আমরা পরিস্থিতি অবজার্ভ করছি। তবে আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, যাতে সুযোগ পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু করা যায়।’ আলোচনা অনুষ্ঠানে পরীক্ষা নিয়ে সংকট কাটাতে ব্যতিক্রমধর্মী একটি মতামত তুলে ধরেন শিক্ষাবিদ ও ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতির বিকেন্দ্রেীকরণ করতে হবে। অর্থাৎ কলেজগুলো যদি নিজেরাই নিজেদের ছাত্রদের পরীক্ষা নিতে পারে, তাহলে খুব সহজেই এই সংকট কাটানো যাবে। প্রয়োজনে কিছু বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে।’
সর্বোপরি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তের অনুরোধ জানান দৈনিক বাংলাদেশের আলো’র সম্পাদক।