লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালের বিরুদ্ধে গাছে বেধে কৃষক নির্যাতন, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে চররমনী মোহন এলাকার মামুন হত্যা মামলায় জেলও খেটেছেন এ চেয়ারম্যান।
চলতি বছরের (২৩ আগষ্ট) রাতে চুরির অপবাধ দিয়ে চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়ালের নির্দেশে কৃষক আমীর হোসেনকে গাছে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালকে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৮জনের নাম উল্লেখসহ ৭/৮জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয় এ মামলায়।
একই বছরের (২২ জুলাই) সুমাইয়া ইসলাম শান্তা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আবু ইউসুফ ছৈয়ালও আসামী রয়েছেন।
অপরদিকে ২০১৫ সালের (৯ আগষ্ট) রাতে চররমনী মোহন এলাকার সুমন ঢালীর বাড়ি থেকে চারটি গরু চুরি হয়। উক্ত গরু চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালের বাড়িতে রয়েছে বলে জানতে পারেন সুমন ঢালী। পরে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (এডিএম কোর্ট) গরুগুলো উদ্ধারের জন্য ৯৮ ধারা মোতাবেক আবেদন করেন।
২০১৮ সালের (১০ জানুয়ারী) চাঁদুপুর জেলার হাইমচর এলাকার আবদুল হামিদ সরকারের ছেলে কায়কোবাদ বাদী হয়ে ইউসুফ ছৈয়ালকে প্রধানআসামী করে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আবু ইউসুফ ছৈয়াল ছাড়াও আরো ৬ জনের নাম ও ১৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
এ মামলায় বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন চর আলীহাসান এলাকা তার চাষাবাদের জমি রয়েছে। আর জমি রক্ষনা-বেক্ষন করেন একই এলাকার সামছুল হক। কিন্তু প্রতিবছর চাঁদা বাবত জোর করে ৮০শতক জমির ধান কেটে নিতে আসামীরা। এক পর্যায়ে আবু ইউসুফ ছৈয়ালের কাছে বিষয়টি জানালে তিনি পূনরায় ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগ আদালতে মামলা দায়ের করেন কায়কোবাদ চুন্নু।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়েকৃত এসব মামলা তদন্ত ও আদালতের বিচারধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া জেলেদের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার দুই ঘনিষ্টজনকে বিপুল পরিমান সরকারী ভিজিএফের চালসহ আটক করা হয়। নদীতে অপহরণের অভিযোগে চেয়ারম্যানের ভাতিজাসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। চর মেঘাতে জান্নাতুল মাওয়া আশ্রয়ন কেন্দ্রে প্রতি পরিবার থেকে ঘর দেয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীন অবকাঠামো রেক্ষনা-বেক্ষন (টিআর) প্রকল্পের কাজ না করে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভূয়া কমিটি গঠন করে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিয়ে আত্নসাৎ করেন। এসব বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানী করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
পুরো ইউনিয়ন নিজের কব্জায় রেখে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে ছৈয়াল। চেয়ারম্যান বাহিনীর বিরেুদ্ধে চরে এবং নদীতে দস্যুতা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
জেলেদের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার দুই ঘনিষ্টজনকে আটকও করা হয়। নদীতে অপহরণের অভিযোগে চেয়ারম্যানের ভাতিজাসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
এতো কিছুর পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছৈয়াল। অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন তিনি।
এদিকে, কৃষক আমির হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তারা এখনো আটক না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে হাতাশ বিরাজ করছে। মামলার এজাহারভূক্ত আসামী হয়েও এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে অভিযুক্তরা। তবে এ ঘটনায় জুলহাস, দেলু মুন্সী ও সাইজ উদ্দিন নামে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগষ্ট রাতে চর আলী হাসান গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর পুত্র কৃষক আমির হোসেন বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে স্থানীয় লোকজন দিয়ে আটক করান ইউপি চেয়ারম্যন ছৈয়াল। পরে তার অনুসারীরা আমির হোসেকে গাছের সাথে বেঁধে চোর আখ্যা দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
এ ঘটনার পর চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্যাতিত আমির এবং তার পরিবারের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চেড়ে দেন। গত ১ সেপ্টেম্বর আমির হোসেন চেয়ারম্যান ছৈয়ালকে প্রধান ও মেম্বার স্বপনসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। এতে আরও ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
পুলিশ এজাহারভূক্ত তিন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চেয়ারম্যান এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানায় এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী কৃষক পরিবার।
ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা বেহাল। অথচ এসব সড়কে বর্ষার সময় পানির কারনে চলাচল করা যাচ্ছেনা। প্রতি বছরে বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নের বরাদ্ধ আসলো কাজ না করে কাগজে-কলমে শ্রমিক নিয়োগ দেখানো হয়। কাজের কাজ কিছুই হয়না।
এতো কিছুর পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল। অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন তিনি।
তবে এসব বিষয়ে শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার মতামত জানা যায়নি।