মানিকগঞ্জের সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিংগাইরের বাস্তা ও সাহরাইল এর ফার্মেসিতে, সাভার আধুনিক হাসপাতাল ও ঢাকার ওয়ারীতেও চেম্বার বসিয়ে ভালোই প্রতারণার আসর বসিয়েছিলেন প্রমোদ চক্রবর্তী। কোনোমতে এসএসসি পাস করা এই ডাক্তার নিজের নামের সামনে লাগিয়েছেন ডাক্তার তকমা। আর ভিজিটিং কার্ড ও ব্যবস্থাপত্রে নামের নিচে বসিয়েছেন এমবিবিএস, পিজিটি (সার্জারি), মা ও শিশু রোগে অভিজ্ঞ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ইত্যাদি পরিচয়।
এতদিনে বেরিয়েছে তার আসল পরিচয়। মেডিক্যালের কিছু না পাস করা কোনও ডিগ্রিবিহীন এই ভুয়া ডাক্তারকে বিশাল অর্থদণ্ড দিয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি সে প্রশ্ন এখন মানিকগঞ্জের সচেতন মানুষদের মুখে মুখে।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিংগাইরের বাস্তা ও সাহরাইল এর ফার্মেসিতে, সাভার আধুনিক হাসপাতাল ও ঢাকার ওয়ারীতেও চেম্বার বসিয়ে ভালোই প্রতারণার আসর বসিয়েছিলেন প্রতারক প্রমোদ। নিয়মিত রোগী দেখতেন এসব জায়গায়। রোগীদের কাছ থেকে স্থানভেদে সেবামূল্য (ভিজিট) নিতেন ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা করে। আঁতকে ওঠার মতো আরও তথ্য হচ্ছে, এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী দেখার পাশাপাশি এই ভুয়া ডাক্তার করতেন অপারেশনও।
সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মানিকগঞ্জ কার্যালয়ে ওই প্রতারক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তার কাছে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া মানিকগঞ্জ শহরের রানা হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস এর নির্দেশনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে তদন্ত ও শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত ভুয়া ডাক্তার প্রমোদ চক্রবর্তীকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন এর ৪৪ ধারায় দুই লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করেন ভোক্তা অধিদপ্তর, মানিকগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল।
সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল জানান, প্রমোদ চক্রবর্তী রোগীর দেখার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপত্রে ব্যবহৃত পদবির স্বপক্ষে কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখতে পারেননি। তিনি স্বীকার করেছেন, কোলকাতা থেকে Alternative Medicine বিষয়ে কোর্স করেন কিন্তু বিএমডিসির কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই তার। এতদিন ধরে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের প্রতারণা করে আসছিলেন। ভবিষ্যতে তিনি আর এই ধরনের প্রতারণা করবেন না মর্মে মুচলেকা দিলে তাকে জেল হাজতে না পঠিয়ে অর্থদণ্ড করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস জানান, এমবিবিএস পদবি ব্যবহার করে প্রমোদ চক্রবর্তী সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর তাকে অর্থদণ্ড দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার আইন মোতাবেক আরোপিত জরিমানার ২৫ শতাংশ হিসেবে ৫০,০০০ টাকা অভিযোগকারীকে প্রদান করা হয়েছে।
প্রতারক প্রমোদের এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রানা হোসেনও গণমাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে জানা গেছে, প্রতারক প্রমোদ চক্রবর্তীর বাড়ি মানিকগঞ্জের খাগড়াকুড়ি গ্রামে।