মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকদের উপর হামলা রামগতি ও কমলনগর এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান তিন ইটভাটায় ৬ লাখ টাকা জরিমানা গুঁড়িয়ে দেয়া হলো অবৈধ তিনটি ইটভাটা লক্ষ্মীপুরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি নিয়ে টাস্কফোর্স এর মত বিনিময় সভা নির্বাচনে লড়বেন কিনা জানিয়ে দিলেন ড. ইউনূস নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে জেলা সাংবাদিকদের মত বিনিময় সভা মসজিদের টাকা যুবলীগ নেতার পকেটে! মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরাসরি ঘুষ নেয় ঝাড়ুদার সোহেল ৯ টি দপ্তরে অভিযোগ  খালের অব্যাহত ভাঙনে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত শৈলকুপার বেদে স¤প্রদায়

ঝিনাইদহ থেকে স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ জাহিদুর রহমান তারিকi
  • Update Time : শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৫১৭ Time View
Spread the love

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে ভাষমান অবস্থায় বসবাস করা বেদে স¤প্রদায় প্রতিনিয়ত এরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরা পায়না কোন সাহায্য-সহযোগীতা শুধু ভোটের সময় এলে দেখতে পায় বিভিন্ন জন দরদী মানুষের সুন্দর মুখগুলো। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা কালীন সময়ে এদের ভাষমান ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরা এখন ক্ষুদার জালায় মানবেতর জীবন-যাপন করার পরও এদের পাশে এখন পর্যন্ত জনদরদী ও স্থানীয় কোন সমাজ সেবকের চেহারা দেখতে পায়নি। সূত্রমতে বেদে স¤প্রদায় একটি ভাষমান ও ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। এদেরকে আঞ্চলিক ভাষায় বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত। কথিত আছে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল সেনের সাথে এরা ঢাকায় এসেছিল। এরা প্রথমে বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে এবং পরে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তারা ভাসমান ও বিভিন্ন এলাকায় একেক সময় একেক যায়গায় অস্থায়ীভাবে ঘাঁটি বেঁধে অবস্থান করে। বেদে মহিলারা বেশিরভাগ সিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা ফেলানোসহ ঝাঁড়ফুক করে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আবার কিছু বেদে নারী ঘুরে ফিরে চুরি-ফিতা বিক্রি করেন। তবে কিছু পুরুষ বেদে নদীতে মাছ শিকার আর সাপ ও বানরের খেলা দেখালেও বেশিরভাগ বেদে পুরুষের সময় কাটে অলসভাবে। আধুনিক সভ্যতা আর প্রযুক্তির জাঁতাকলে বেদে স¤প্রদায়ের এ ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যুগের মানুষ আজ তাদের এ তন্ত্র মন্ত্রের চিকিৎসাকে বিশ্বাস করে না। তাই কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার। তার মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এ স¤প্রদায়কে। বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হলেও পাচ্ছেন না তারা নাগরিক সুভিদা কিংবা পূরণ হচ্ছে না মৌলিক অধিকার। শুধু তাই নয়, চলমান মহামারিতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারি এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত মানবিক সহায়তা পেলেও তা এখনো গিয়ে পৌছেনি বেদে পল্লীতে। ফলে অনেকটা না খেয়ে অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন বেদে স¤প্রদায়ের মানুষগুলো। বর্তমান করোনাকালীন সময় নিয়ে নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানিয়েছেন,শৈলকুপা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের কুমার নদের পাড়ে অবস্থান নেয়া বেদে পল্লীর সর্দার সিরাজুল জানান ‘করেনাকালীন সময়ে আমাদের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। এখন সারা দিন ঘরে সর্বোচ্চ ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত উপার্যন হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ সময় একেবারে খালি হাতেই ফিরতে হয়। আর এ দিন আমাদের না খেয়েই থাকতে হয়। তারা বলেন, ‘করোনার আগে আমরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে আয় করেছি। কিন্তু করোনাকালিন সময়ে মানুষ আমাদের গ্রামে ঢুকতে দেয় না। তাই উপার্যন একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে আগত ভাটই এলাকার বেদে পল্লীর বাসিন্দা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন,”সরকার আমাদের নাগরিকত্ব দিলেও কোন ধরণের নাগরিক সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। এই করোনাকালিন সময়েও কেউ আমাদের খোঁজ খবর নিতে আসেনি। অথচ ভোটের সময় এলেই জন প্রতিনিধিরা ভোটের জন্য আশ্বাসের ফুলঝুড়ি নিয়ে আসে। ভোট শেষে তাদের আর কোন খবর থাকে না।শুনছি সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু তাও আমাদের এই বেদে পল্লী পর্যন্ত এসে পৌছায়নি।” এমন পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে বেশিরভাগ সময় না খেয়েই দিন কাটছে দাবি করে সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতার আশা করেন বেদে পল্লীর মানুষগুলো। এসব বেদে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে করুন পরিস্থিতি। ভাসমান এই জনগোষ্ঠী নাগরিকত্ব পেলেও ন্যূনতম নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্ছিত তারা। এসব পল্লীর মানুষ বলেন, ‘আমরা পেশার পরিবর্তন চাই। অন্যান্য মানুষের মতই সমাজে উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু সমাজ আমাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা পড়াশুনা না জানায় অন্য পেশায় যেতে পারছি না। কেউ কাজে নিতে চাচ্ছে না। সন্তানটিকে পর্যন্ত লেখা-পড়া করাতে পারছি না। শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বেচে আছি। আমাদের থেকে রোহিঙ্গারাও বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বেদে স¤প্রদায়ের বঞ্চিত মানুষেরা। অবহেলিত বেদে স¤প্রদায়ের সমস্যা নিয়ে কথা হয় শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলামের সাথে। এসময় তিনি বলেন, ”করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ সকল স¤প্রদায়ের মাঝেই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছি। আর এই কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। তাই কেউ একদমই কোন সহায়তা পাননি এটা সঠিক নয়। তার পরেও কেউ যথাযথভাবে আবেদন করলে আমরা তাদেরকে সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় আনব”।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015 teamreportbd
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
itzone